আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মহানগর আ’লীগে থাকছেন যারা

 প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দিবেন- আনোয়ার
 দায়িত্ব পেলে দল ও মানুষের স্বার্থে কাজ করবো- আরাফাত
 কখনোই মহানগর আওয়ামী লীগের পদের কথা ভাবিনি- দিপু

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পূর্বেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উক্ত ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শুরু করে দিয়েছেন দৌড় ঝাপ। আগামী কমিটিতে বিভিন্ন পদ পদবি পাওয়ার আশায় তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন দিক বেদিক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা কমিটি সাজানোর বিষয়ে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। যার ন্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান নওফেল নারায়ণগঞ্জে আসতে পারেন যেকোন সময়।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে খুব শীঘ্রই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, এবার কমিটিতে অনেক প্রবীণ নেতৃত্ব পদ পদবী নাও পেতে পারেন। তথা বয়স্ক কিংবা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় যারা দল পরিচলনারা ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছেন না তাদেরকে এবার কমিটিতে রাখা হবে না। একাধিক সূত্রে জানা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা আনোয়ার হোসেন যিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতির লড়াকু সৈনিক হিসেবে পরিচিত। দলের দুঃসময়ের নেতৃত্ব প্রদানকারী সেই আনোয়ার হোসেন এবারও কমিটিতে থাকবেন। তবে সেটা প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভও করছে।

বিষয়টি পরিষ্কার করতে মহানগর আওয়ামী লীগের অভিভাবক তথা সভাপতি পদে থাকা আনোয়ার হোসেনকে মুঠোফোন করা হয় দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকা অফিস থেকে। দলীয় নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। পূর্বের কমিটি গুলোতেও প্রধানমন্ত্রীর হন্তক্ষেপ ছিলো। সে যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামীতে যোগ্য ব্যক্তিকেই তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিবেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই বাদ পরতে পারেন, নতুন মুখ আসতে পারে। এখানে মন খারাপ করার কিছুই নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত। নেত্রীর সিদ্ধান্তের পরে কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেউই মন খারাপ কিংবা বির্তক সৃষ্টি করবে না। কারণ নেত্রী দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে সবসময় ভালোকেই বেছে নিয়েছেন এবং আগামীতেও নিবেন।

জানা যায়, এবারের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী গঠন করা হবে। এতে করে বিপত্তিতে পরতে যাচ্ছেন ঐ সকল নেতাকর্মীরা যারা পূর্বে দলীয় লবিং ও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছিলেন এবং চলবে না কোন সুপারিশও। বিগত সময়ে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন ব্যাপক শ্রম দিয়েছেন দলের জন্য নিষ্ঠাবান হয়ে দলীয় নির্দেশনা মেনে চলেছেন সে সকল ব্যক্তিরাই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে প্রাধান্য পাবে বলে জানা যায়।

এদিকে অনেকেই মনে করেন, তরুণ নেতৃত্ব তৈরী করার কারিগর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। বিভিন্ন সময় দলের স্বার্থে তিনি অনেক কিছুই করেছেন। অনেক ত্যাগ তীতিক্ষা রয়েছে তার রাজনৈতিক জীবনে। সে হিসেবে আগামী কমিটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন আরাফাত।

বিষয়টি জানতে চেয়ে মুঠোফোন করা হয় জিএম আরাফাতকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর মানচিত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের একটা অবস্থান তৈরী হয়েছে। দেশের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দলের দায়িত্ব প্রদান করবেন। এ বিষয়টি নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনার কারণ নেই। তিনি কখনোই নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন না। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভাবেন। সে হিসেবে পূর্বে তিনি যেভাবে যাকে দলের দায়িত্ব দিয়েছেন আগামীতেও সেভাবেই যোগ্য ব্যক্তিকেই দলের দায়িত্ব প্রদান করবেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদবি পেলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দলের দুঃসময়ে সবসময় পাশে ছিলাম আগামীতেও থাকবো। নেত্রী যদি আমাকে মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সাধারণ মানুষ ও দলের জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরী করে দেন সেক্ষেত্রে আমি পূর্বে যেমন দল ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম। দায়িত্ব পেলে আগামীতেও সেভাবেই কাজ করবো।

সূত্র জানায়, মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা এডভোকেট খোকন সাহাকেও।

পূর্বে যেসকল নেতাকর্মীরা দলের ভাবমূর্তী নষ্ট করে চাদঁবাজী, ভূমিদস্যু, ঝুট সন্ত্রাসী ও অবৈধ কার্যকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর নিজ দায়িত্বে করা আগামী কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে না বলেও দলীয় সূত্রে জানা যায়।

অন্যদিকে একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সমসাময়িক বেশ কিছু ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা শাহ নিজামকে নিয়ে। এসকল কারণে আগামী কমিটিতে দেখা নাও যেতে পারে তাকে।
আগামী কমিটিতে নতুন করে আসতে পারে অনেক মুখ। যারা কিনা কখনোই মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করার কথা চিন্তাই করেননি। তাদেরই মধ্যে একজন সাবেক জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু। একাধিক সূত্রে জানা যায়, মহানগরের দায়িত্ব পালন করতে তার কাধেঁও দেয়া হতে পারে দায়িত্ব।
বিষয়টি মুঠোফোনে উপস্থাপন করা হয় আনিসুর রহমান দিপুর কাছে। তিনি বলেন, আমি কখনোই মহানগর আওয়ামী লীগের পদের কথা ভাবিনি। কারণ আমি বিগত সময় জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছি। দলীয় নেত্রী বোঝেন কে কোন জায়গায় যোগ্য। কাকে কী দায়িত্ব দিলে কে কিভাবে তা পালন করবেন। সেক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তেই সবাই অনড় থাকবেন। নেত্রী যেভাবে কমিটি সাজাবে সেভাবেই কমিটি সাজবে। এ বিষয়ে চিন্তার কিছুই নেই। দায়িত্ব দেয়া হলেও দলের পাশে থাকবো, দায়িত্ব না পেলেও দলের পাশেই থাকবো। দলের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে কখনোই পিছপা হবো না। দায়িত্ব পেলে জীবন দিয়ে হলেও তা পালন করবো।

সবমিলিয়ে জেলার সচেতন মহলের মতে, এবারের কমিটিতে চমকপদ কিছু দৃশ্য থাকতে পারে। কারণ কমিটি ঘোষণা করার পূর্বেই কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যেমন, এবারের কমিটিতে প্রবীণদের থাকার সুযোগ কম। এছাড়াও বিতর্কিতরা কমিটিতে জায়গা পাবেন না। আবার আসতে পারে নতুন মুখও। সবমিলিয়ে কাকে দেয়া হবে দায়িত্ব কিংবা কে বাদ পড়বেন এসকল বিষয় নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে।